আবদুল্লাহ আলআল আজিজ, উখিয়া: 

রমজান মাসের এই সময়ে প্রতিদিন বিকেল হতে না হতেই উখিয়া উপজেলা বিভিন্ন বাজারে সড়ক ও ফুটপাত দখল করে বিক্রি হচ্ছে রকমারি ইফতার। অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে বিক্রি করা এসব ইফতারের মান নিয়ে রয়েছে যথেষ্ট প্রশ্ন। বিশেষ করে এসব খাদ্যে বিষাক্ত রাসায়নিক কেমিক্যাল ও রংয়ের অবাধ ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ইফতার কিনতে আসা রোজাদারেরা।

এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন বাজারের অলি-গলিতেও গড়ে উঠেছে ইফতার সামগ্রীর দোকান। হাতেগোনা কয়েকটা ভাল রেস্টুরেন্টে অল্প সংখ্যক মানুষ ছাড়া অধিকাংশ মানুষকে ফুটপাতের অস্থায়ী দোকান থেকে ইফতার সামগ্রী কিনতে দেখা গেছে। এ সুযোগে কোনো কোনো দোকানি আগের দিনের থেকে যাওয়া ইফতারের খাবারের সঙ্গে পরের দিনের ইফতার মিলিয়ে টাটকা খাবার হিসেবে বিক্রি করছেন। তবুও এসব দোকানিদের দম ফেলার সুযোগ নেই। রয়েছে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভীড়। ক্রেতাদের অধিকাংশই মধ্যবিত্ত ও নিন্ম আয়ের মানুষ। খাবার বাসি ও অস্বাস্থ্যকর জেনেও কিনছেন অনেক ক্রেতা। দামে একটু সস্তা হওয়ায় টাকা দিয়ে কিনেও অস্বাস্থ্যকর ও বাসি খাবার খেতে যেন বাধ্য হচ্ছেন নিন্ম আয়ের মানুষেরা।

উপজেলার ব্যস্ততম ষ্টেশন কোটবাজার, মরিচ্যা, সোনার পাড়া, উখিয়া সদর, বালুখালী, কুতুপালং, থাইংখালী,পালংখালী সড়কের পাশে খোলা জায়গায় বিক্রি হওয়া এসব ইফতার সামগ্রী খেয়ে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। এ বিষয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চিকিৎসকরাও।

উপজেলার বাজারের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সড়কে এবার ইফতারি আয়োজনের পসরা সাজিয়ে বসেছে দোকানদারেরা। আর এ সমস্ত পসরায় বিভিন্ন কায়দায় বিক্রি হচ্ছে এসব ইফতার।

স্থানীয় রোজাদাররা অভিযোগ করেন, ইফতার সামগ্রী বিক্রেতাদের অনেকে ইফতার সামগ্রীতে বিভিন্ন রকমের রাসায়নিক কেমিক্যাল, কস্টিক সোডা ও বেসন ব্যবহার করছে। জিলাপি, বেগুনি, পেঁয়াজুসহ বিভিন্ন সামগ্রীতে এসব ক্ষতিকারক উপাদান ব্যবহার করা হচ্ছে।

উখিয়া উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজার ঘুরে দেখা যায়, বেশিরভাগ ইফতারের দোকান বসেছে খোলা জায়গায়। টেবিলের ইফতার সামগ্রীতে ব্যবহার করা হচ্ছে না কোনো ঢাকনা। ফলে এসব খাবারে মাছি বসছে। ধুলাবালিতো আছেই। তবে এসব সামগ্রীর দামও বেশ চড়া।

রং ব্যবহার করে ইফতার তৈরি কিংবা খোলা পরিবেশে ইফতার বিক্রি বিষয়ে বিক্রেতাদের বিন্দুমাত্র সচেতনতা দেখা যায়নি । বরং এটাকেই তারা স্বাভাবিক মনে করছেন ।

অনেকেই বলেন এত নিয়ম মেনে ইফতার বিক্রি সম্ভব না। আর দামের বিষয়ে বলেন, সব কিছুর দাম বাড়তি। এ কারণে ইফতার সামগ্রীর দামও বেড়েছে।

কোটবাজার দক্ষিণ ষ্টেশনের আর.জে বাণিজ্যলয়ের ক্যাশিয়ার আবরার শাওন রোস্তম অভিযোগ করে বলেন, উখিয়া উপজেলার বিভিন্ন সড়কে ধুলাবালির মাঝেই উন্মুক্ত স্থানে বসানো হচ্ছে ইফতার সামগ্রীর পসরা। এসব দোকানিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। অনেকেই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি ইফতার সামগ্রী খেয়ে অসুস্থ হচ্ছেন। অথচ এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের তেমন কোন তৎপরতা নেই ।

একই রকম অভিযোগ করেন জালিয়া পালং ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ইউ.পি সদস্য মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ইফতার সামগ্রী তৈরিতে বিভিন্ন কেমিক্যাল ও কড়া রং ব্যবহার করা হচ্ছে।
যার কারণে মানুষ সস্তা খুঁজতে গিয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছে।

ইফতারি সামগ্রীতে কেমিক্যাল, রং ব্যবহার মানুষকে ভয়ানক স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে বলে মনে করেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মিসবাহ উদ্দিন।

তিনি বলেন, কেমিক্যাল স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক। লিভার, কিডনি নষ্ট হয়ে পরবর্তীতে তা ক্যান্সারের সৃষ্টি করতে পারে। নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার তৈরির কারণে মানুষ পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি গ্যাস্টিক ও আলসারে আক্রান্ত হতে পারে। সেই সঙ্গে পোড়া তেল, অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

কোটবাজার দোকান মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব আবু ছিদ্দিক সওঃ জানান, আমরা ব্যবসায়ীদের এসব বিষয়ে সচেতন করে তোলার চেষ্টা করছি। আমি চাই উখিয়া উপজেলার সমস্ত বাজারে যেন স্বাস্থ্যকর খাবার বিক্রি হয়।

অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ইফতার সামগ্রী বিক্রির ব্যাপারে জানতে চাইলে উখিয়া উপজেলা স্যানিটারী ইন্সপেক্টর নুরুল আলম বলেন, এ ব্যাপারে এখনো কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।